
বয়সের ছাপ দূর করার উপায়
বয়সের ছাপ আপনাকে ছুঁতে আসতে পারে, এটা সময়ের আগে অথবা পরে ঘটতে পারে আপনার রঙ, বর্ণ, এবং ত্বকের প্রকৃতির প্রভাবে। তবে এটি যেন ভুলে যায় না যে, কপাল এবং চোখের চারপাশে যে ভাঁজ পড়ে সেটা প্রাকৃতিক এবং সমাধান আছে। মূলত মানুষ ২০ বছর অতিক্রম করার পর থেকে ত্বকের ভাঁজ এবং সূক্ষ্ম রেখাগুলি দেখা দিতে শুরু করে, তবে এর জন্য চিন্তা করার কোন কারণ নেই।
রুটিন মেনে সৌন্দর্য সম্পর্কে আলোচনা করলে ত্বকের ভাঁজগুলি অনেকটাই মসৃণ থাকে অনেককাল পর্যন্ত। না, আলাদা কোন স্কিন কেয়ার রুটিনের প্রয়োজন নেই। আপনার দৈনন্দিন রুটিনে এসব যোগ করলে আপনি সমস্যার মুক্তি পাবেন। তবে এই সমস্যা নিয়ে আলোচনার আগে কিছু জরুরী প্রশ্ন উঠে যায়, যেমন বয়সের প্রভাব কি এবং কেন হয়।
বয়সের ছাপ বা রিঙ্কেলস কি?
রিংকেলস শব্দটি ত্বকের কুঁচকানো অবস্থার সাথে সম্পর্কিত। এটি মূলত বয়সের প্রভাব দেওয়ার জন্য পরিচিত। সময়ের সাথে ত্বকের কুঁচকানো অবস্থাটি রিংকেলস নামে পরিচিত। বয়স বৃদ্ধির সাথে ত্বকে পুষ্টিহীনতা দেখা দেয় এবং ত্বকের নমনীয়তা কমে ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি পায়। প্রাকৃতিক তেলের উৎপাদন হ্রাস পায় তবে এটি ত্বককে শুষ্ক করতে শুরু করে এবং শুষ্কতা থেকে মূলত ত্বক সঙ্কুচিত হয়ে রিংকেলস বৃদ্ধি পায়।
রিংকেলস দুই প্রকারের হতে পারে। একটি গতিশীল এবং অপরটি স্থির। হাসি বা বিরক্তিতে ত্বকে কুঁচকানো ফোঁটা যখন তা পরিবর্তন হতে থাকে, তখন এটি গতিশীল বা ডাইনামিক রিংকেলস হয়। এটা অস্থায়ী; কারণ মুখাবয়বের চেহারা পরিবর্তন হলে এটি পরিবর্তিত হয়ে যায়। অপরদিকে, স্থির রিংকেলস হল বয়সের জন্য স্থায়ীভাবে ত্বকের উপর চাপ দেয়া ফোঁটা। এটি প্রধানত বাহ্যিক কারণে ঘটে। সময়ের সাথে সাথে, ডাইনামিক রিংকেলস স্থির রিংকেলস হতে উন্নত হয় এবং দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়।
কেন হয়?
দীর্ঘ সময় সূর্যালোকে অবস্থিত থাকা, বছরের পর বছর ধূমপান করা, এবং বয়স বৃদ্ধি এই সব কারণেই রিঙ্কেলস উদ্ভব হয়। এসবের ফলে এপিডার্মিস পাতলা হয়ে যায়, ত্বকের নমনীয়তা হ্রাস পায় এবং ত্বকের স্থিরতা কমে যায়। সানস্ক্রিন ব্যবহার না করলে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি ত্বকের গভীরের কানেকটিভ টিস্যু (কোলাজেন এবং ইলাস্টিন ফাইবার) ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা ত্বকের টানটান ও মোচড়ানো ভাব তৈরি করে এবং অবৈধ ত্বকে বয়সের চিহ্ন বাধা দেয়।
রিঙ্কেল সাধারণত কোথায় হয়?
আপনার শরীরের যে কোন স্থানে রিঙ্কেল হতে পারে। তবে সর্বাধিক প্রচলিত স্থান হচ্ছে মুখমণ্ডল। যেখানে প্রায় ৪২টা স্বতন্ত্র পেশী রয়েছে যেগুলো প্রতিনিয়ত চলমান।
ক্রোস ফিট বা বলিরেখা
বয়স বাড়ানোর সাথে সাথে পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের চেহারায় বলিরেখা দেখা দেয়। তবে দেখা যায় যে, প্রায় ৮৪% নারীদেরই অন্যান্য রিঙ্কেল আসার আগেই বলিরেখা বা ক্রোস ফিট দেখা দেয়। শরীরের অন্য কোনো অঞ্চলের ত্বকের চাইতে চোখের চারপাশের ত্বক অত্যন্ত পাতলা। তাছাড়া, রিঙ্কেল থেকে রক্ষা করতে এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে কোলাজেন এবং ইলাস্টিন থাকে না।
দ্য ইলেভেনস (গ্লাবেলার লাইনস)
ইলেভেনস হল দুটি রেখা যা আপনার ভ্রুজোড়ার মাঝে অবস্থিত। ভ্রুজোড়া পুনঃপুনির ফলে এটি অধিক সম্ভাবনায় ঘটতে পারে। এটি ডাইনামিক রেঞ্জের একটি প্রধান উদাহরণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
লাফ লাইনস
যদিও এটি হাসির জন্য নামকরণ করা হয়, তবুও এটি ন্যাসোলেবিয়াল ভাঁজের কারণে ঘটে। এটি নাকের বাইরের দুপাশ থেকে মুখের কোণার দিকে প্রসারিত হয়ে থাকে এবং এর কারণ হচ্ছে মুখের স্বতন্ত্র পেশীগুলির নির্বাসন। বয়স বাড়লে, সাবকুটেনিয়াস ফ্যাটের হ্রাসের ফলে লাফ লাইনস দেখা দেতে পারে।
ফোরহেড লাইনস
ফোরহেড লাইনস হল কপালের উপর সমান্তরাল কুঁচকানো রেখা। এটি ভ্রুর নড়াচড়ার ফলে সাধারণত দৃশ্যমান হয়। কিছু মানুষের জেনেটিক এবং লাইফস্টাইলের কারণে বা অন্য কারণে ফোরহেড লাইনস অনেক বেশি হতে পারে।
দূর করার উপায় কি?
রিংকেল বা বয়সের ছাপ অতি সহজেই দূর করা যায়। যদিও কিছুটা এর অস্তিত্ব নিশ্চিত করা যায় না, তবে এর দৃশ্যমান উপস্থিতি হ্রাস করা যায় বেশিরভাগ সময়ে। এটি ঘরোয়া এবং চিকিৎসাগত দুইটি পদ্ধতিতেই সম্ভব।
বয়সের ছাপ দূর করার ঘরোয়া উপায়
রেটিনয়েডস
রেটিনয়েডস হল চামড়ার রেখা এবং বলিতে হলের প্রতিরোধ করার জন্য সর্বাধিক কার্যকরী পথ। এটির মধ্যে থাকা ভিটামিন এ ডিরাইভেটিভ কোষগুলির ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি যোগায় এবং কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি করে। এটি শুধুমাত্র রেখাকে হস্তক্ষেপ করে না; বরং চামড়াকে সহজ ও নরম করে, এবং গাঢ় দাগগুলি দূর করতে সাহায্য করে। তবে, অতিরিক্ত ব্যবহারে ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে পারে। এটি সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করা যায় এবং অবশ্যই ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
আন্টি-অক্সিডেন্ট
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট – ভিটামিন C, নিয়াসিনামাইড এবং রেসভেরাট্রোল – এগুলি সব রেডিক্যালের নিয়ন্ত্রণ করে এবং আমাদের ত্বকের ক্ষতি এবং রিঙ্কেলের জন্য দায়ী। এটি কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়, যা ত্বকের স্নায়ুতা নিয়ে আসে।
আলফা হাইড্রক্সি এসিড
আলফা হাইড্রোক্সি এসিড (এএইচএ) হল এমন একটি যেখানে গ্লাইকোলিক, সাইট্রিক এবং ল্যাকটিক এসিড রয়েছে; এটি সেলসমৃদ্ধি বৃদ্ধি করে, কোলাজেনের মাত্রা বাড়ায় এবং রিংকেলের উপস্থিতি হ্রাস করতে সাহায্য করে।
নিউরোটক্সিন
ইনজেকশন দেওয়া সম্পর্কে অনেকেই সমস্যা পায়; তবে বোটুনিলাম টক্সিনের এ সূক্ষ্ম অংশটি রিঙ্কেলের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকরী। বোটক্স, জেওমিন এবং জিউভিয়াওয়ের মতো নিউরোটক্সিনগুলি অস্থির ভাবে পেশী সংকোচন থামিয়ে ডায়নামিক রিঙ্কেল হ্রাস করে। তবে নিউরোটক্সিন ব্যবহারে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী।
ফিলার্স
ফিলার হল মৃদু এবং জেল ধরণের পদার্থ, যা ত্বকের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে ত্বকের সুরক্ষা করতে কাজ করে। কালো দাগের নীচে, গালের হাড়ের উঁচুতা, পুরু ঠোঁট এবং নাসোলাবিয়াল ভাঙতে এটি ব্যবহৃত হয়। হাইআলুরনিক এসিড ফিলার দুই বছর ধরে স্থিতিশীল থাকে।
লেজার
নন-অ্যাবলেটিভ রিসারফেসিং লেজার হল এমন একটি লেজার প্রকার যা ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে তবে ত্বকের উপরের সারফেসকে আঘাত করে না, এবং বয়সের ছাপের বিভিন্ন ধরণের রেখাগুলির নিরাময়ে অসাধারণ কাজ করে। এটির মধ্যে কোলাজেন উৎপাদন বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এছাড়াও, এটি লোমকূপ শোধন, অদৃশ্যতা রক্ষা, গাঢ় দাগ সরানো, ত্বকের টেক্সচার এবং স্কিন টোন প্রকৃতিসহ রাখে। তবে, এর কিছু নেতিবাচক প্রভাব হতে পারে, যেমন লেজার চিকিৎসা যদি ঠিকমতো না হয়।
ইউএলথেরাপি ও থার্মেজ
ইনজেকশন বা লেজার ব্যবহার ছাড়া, ইউএলথেরাপি ও থার্মেজ হল একটি দুর্দান্ত পরিকর্ম। ইউএলথেরাপিতে ত্বকের টিস্যুতে গরম ভাব প্রদান করে, যা দেহের কোলাজেন প্রস্তুতি করে এবং খুব কার্যকরী হয়। অন্যদিকে, থার্মেজ হল একটি ননসার্জিক্যাল চিকিৎসা; এটি ত্বককে টাইট করে আল্ট্রাসাউন্ড এনার্জির মাধ্যমে এবং কোলাজেন উৎপাদন ত্বরান্বিত করে।
থ্রেড লিফট
এই পদ্ধতিতে ডাক্তার গাল এবং কপালে ১৮টি প্লাস্টিক থ্রেড প্রবেশ করে ত্বকের মধ্যে। সেগুলো অত্যন্ত সজীব থাকে এবং ত্বক অনেকটাই উপরের দিকে উঠে আসে। তবে থ্রেডের কারণে চুলকানি, জ্বালাপোড়া এবং এমনকি ইনফেকশন হতে পারে।
ফেইসলিফট
ফেইসলিফট মূলত চেহারার নিম্নাংশ এবং ঘাড়ের জন্য কার্যকরী। এটি সাময়িকভাবে ত্বককে শক্ত করে দেয়। ফলে ত্বকের অতিরিক্ত চর্বি এবং স্বতন্ত্র পেশী নিস্তেজ হতে শুরু করে, এবং ধীরে ধীরে ত্বকের ভাঁজ ও বলিরেখা মুছে যায় এবং ত্বকে তারুণ্যতা ফিরে আসে।