তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ত্বকের যত্নের রুটিন জানতে চান , চিন্তা করবেন না, একজন পাকা স্কিনকেয়ার বিশেষজ্ঞ হিসাবে, তৈলাক্ত ত্বকের নিজস্ব একটা মন আছে। এটি আপনার সেরা বন্ধু বা আপনার সবচেয়ে খারাপ শত্রু হতে পারে, আপনি কীভাবে এটি ব্যবহার করেন তার উপর নির্ভর করে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য একটি সফল স্কিনকেয়ার রুটিনের চাবিকাঠি হল আপনার ত্বককে হাইড্রেটেড রেখে তেল উৎপাদনের ভারসাম্য বজায় রাখা।

তৈলাক্ত ত্বকের স্কিনকেয়ার রুটিন যেমন হওয়া উচিত
স্কিনকেয়ার রুটিন ঠিক করার আগে জানতে হয় স্কিনের ধরনটা কেমন। সেটা কি ড্রাই নাকি অয়েলি? মানে শুষ্ক ত্বক নাকি তৈলাক্ত? নির্দিষ্ট ধরনের ত্বকের জন্য চাই নির্দিষ্ট স্কিনকেয়ার রুটিন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এক ধরনের এবং শুষ্ক ত্বকের জন্য আরেক ধরনের। তবে এখানেও কিছু কথা আছে। ত্বক তৈলাক্ত মানেই আজীবন তৈলাক্ত থাকবে এমন কোন কথা নেই। শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তাহলে যদি ত্বক তৈলাক্ত হয়, স্কিনকেয়ার রুটিন কীভাবে সাজাবেন? কোন ধারণা আছে? না থাকলেও সমস্যা নেই। কারণ, আজকের আয়োজনই তা নিয়ে।
সকালের রুটিন
ক্লিনজার

যেকোনো স্কিনকেয়ার রুটিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ক্লিনজিং। আর যদি ত্বক তৈলাক্ত হয়, তাহলে ক্লিনজারের কোন বিকল্প নেই। তৈলাক্ত ত্বক সকালবেলা পরিষ্কার না করলেই নয়। কেননা, ময়লা, অতিরিক্ত তেল এবং ত্বকের ইম্পিউরিটিসগুলো সারা রাত ভর ত্বকে জমাট বাঁধতে পারে। আর তা স্কিনের পোরসগুলো বন্ধ করে দিতে পারে। তাই দিনের শুরুতে সতেজতার জন্য হালকা ওয়াটার-বেজড ক্লিনজার ব্যবহার করুন।
এক্সফোলিয়েশন সমৃদ্ধ ক্লিনজার হলে ভালো; তবে ক্লিনজারের উপাদানে স্যালসিলিক এসিড থাকাটাও নিঃসন্দেহে ভালো। কেননা, এই ক্লিনজার ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নিয়ে এবং ত্বকের মৃত কোষ পরিষ্কার করে পোরসগুলোর বন্ধ হয়ে যাওয়া রোধ করে। এই ক্লিনজার ত্বকে আগত পরবর্তী প্রোডাক্টগুলোর কার্যকারিতা বাড়িয়ে তুলে।
২. এক্সফোলিয়েশন

ত্বকে মৃত কোষ বৃদ্ধি, ব্ল্যাকহেডস এবং পোরস বন্ধ হওয়ার কারণে তৈলাক্ত ত্বক বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। উপরন্তু, পরিবেশগত ক্ষতির কারণে ত্বক রুক্ষ, নিষ্প্রাণ, এবং অসম হয়ে যেতে পারে। একইসাথে ত্বকে বলিরেখা ফুটে ওঠায় চেহারা তার সৌন্দর্য হারায়। তাই, সপ্তাহে অন্তত ২/৩ বার হালকা এক্সফোলিয়েন্টের সাহায্যে এক্সফোলিয়েট করা জরুরী। কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট – যেমন এএইচএ (আলফা হাইড্রক্সি এসিড) এবং বিএইচএ (বেটা হাইড্রক্সি এসিড) – চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে এবং নিষ্প্রভ ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে ত্বকের টার্নওভারকে বুস্ট করে। অন্যদিকে, ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট ত্বকের টেক্সচার সুন্দর ও মসৃণ করতে সাহায্য করে।
৩. টোনার

শুষ্ক ত্বক এবং তৈলাক্ত ত্বকে টোনারের কাজ একই রকম। এটি ত্বকের ময়লা ও মেকআপের অবশিষ্টাংশ দূর করে, এবং স্কিনকেয়ার রুটিনের পরবর্তী ধাপের জন্য ত্বককে প্রস্তুত করে তোলে। এছাড়া, এটি পরবর্তী প্রোডাক্টের উপাদানগুলো শুষে নিতে ত্বককে সাহায্য করে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য একটি ভালো টোনার ত্বককে শুষ্ক করবে না, আবার অতিরিক্ত তেলও দূর করবে না; বরং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াবে। এমনকি টোনার ত্বকের ময়েশ্চার লেভেলও ঠিক রাখে।
৪. সিরাম/এসেন্স/অ্যাম্পুল

এই ধাপে এসে আপনাকে বেছে নিতে হবে ঠিক কোনটা আপনার ত্বকের জন্য জরুরি। যদি মনে হয় ত্বকের হাইড্রেশন দরকার, তাহলে হাইড্রেটিং ট্রিটমেন্ট করতে হবে। যদি মনে হয় ত্বকের সূক্ষ্ম রেখা ও বলিরেখার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ দরকার, তাহলে অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্ট করতে হবে। যদি মনে হয় ত্বকের উজ্জ্বলতা দরকার, তাহলে ব্রাইটেনিং ট্রিটমেন্ট করতে হবে। যেহেতু আপনার ত্বক তৈলাক্ত, তাই সহজেই শুষে নেয় এমন ওয়াটারি এবং হালকা ট্রিটমেন্টই বেশি কার্যকর হবে।
৫. ময়শ্চারাইজার এবং আই ক্রিম


ইমালশন বা জেল-জাতীয় ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াবে। ক্রিম-বেজড ময়শ্চারাইজার ত্বকের পোরসগুলোতে আটকে যাবার সম্ভাবনা থাকে। আপনার ত্বক যদি সংবেদনশীল বা জ্বালাময় হয়, তাহলে জ্বালা উপশম করে ত্বককে আরাম দেয় এমন ময়শ্চারাইজারও ব্যবহার করা যেতে পারে। এরপর চোখের সুরক্ষা ও আরামের জন্য আই ক্রিম ব্যবহার করা উচিত।
৬. সানস্ক্রিন ও লিপ বাম


সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে এবং বয়সের আগে বার্ধক্যজনিত লক্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জন্য সানস্ক্রিন ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। স্কিন টোন যাই হোক না কেন, অন্তত এসপিএফ (সান প্রটেক্টর ফ্যাক্টর) ৩০ সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। আর সবশেষে, সকাল বেলার স্কিনকেয়ার রুটিন শেষ করুন লিপ বাম দিয়ে। ঠোঁটে কোনো সেবেসিয়াস গ্রন্থি নেই, তাই তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী হলেও ঠোঁট শুকিয়ে যেতে পারে। এজন্য ময়শ্চারাইজিং লিপ বাম ব্যবহার করা উচিত।
সন্ধ্যা/রাতের রুটিন
১. ক্লিনজার

মেকআপ করুন বা নাই করুন, আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত হয় তাহলে রাতে ক্লিনজিং করলে সারা রাত উপকার পাবেন। অয়েল বেজড ক্লিনজার ত্বকের অতিরিক্ত সিবাম এবং মেকআপের অবশিষ্টাংশ খুব সুন্দরভাবে সরিয়ে দেয়। প্রথমে অয়েল বেজড ক্লিনজার দিয়ে ত্বকের ময়লা এবং মেকআপ সরিয়ে ফেলুন। এরপর ওয়াটার বেজড ক্লিনজার ব্যবহার করে ত্বক পরিষ্কার করুন।
২. টোনার

ক্লিনজারের পর পরবর্তী প্রোডাক্ট ব্যবহার করার আগে ত্বকে টোনার ব্যবহার করুন। এটি ময়শ্চার লেভেল ঠিক রাখবে এবং পরবর্তী প্রোডাক্টের প্রয়োজনীয়তা সঠিক করবে।
৩. এক্সফোলিয়েশন এক্সফোলিয়েশন ত্বককে শুষ্ক ও রুক্ষ হওয়া থেকে রক্ষা দেয়। রাতের এক্সফোলিয়েশন সকালের চেয়ে ত্বকের জন্য কার্যকরী হতে পারে। তাই, সপ্তাহে ২/৩ বার রাতে এক্সফোলিয়েশন করুন।
৩. শীট মাস্ক

শীট মাস্ক হলো একটি ফেসমাস্ক, যা চেহারার আদলে ভেজা হয় এবং বিভিন্ন ধরনের ত্বকের জন্য উপকারী উপাদান থাকে, যেমন – অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, মিনারেল, হায়ালুরোনিক এসিড ইত্যাদি। এই মাস্ক ত্বকে হাইড্রেশন, ময়শ্চারাইজিং, নারিশিং, অ্যান্টি-এজিং, পিউরিফাইং এবং ব্রাইটেন করে থাকে। সব ধরনের ত্বকের জন্যই এই শীট মাস্ক পাওয়া যায়। সেরা ফলাফলের জন্য সপ্তাহে ২/৩ বার ব্যবহার করুন।
৪. সিরাম/এসেন্স/অ্যাম্পুল

ঘুমানোর আগে ত্বকে কনসানট্রেটেড ট্রিটমেন্ট করুন যা ত্বকের জন্য যেমন জাদুর মতো কাজ করবে। তবে যেদিন শীট মাস্ক ব্যবহার করবেন সেদিন এই ধাপটা না নিলেও চলবে। কেননা, শীট মাস্কে যতটুকু সিরাম প্রয়োজন সেটা তাতেই থাকে।
৫. ময়শ্চারাইজার এবং আই ক্রিম


নারিশিং ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এটি ত্বকে পুরোপুরি পুষ্টিগুণ সরবরাহ করে এবং চোখের সুরক্ষায় আই ক্রিম ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
৬. লিপ বাম

রাতের বেলা লিপ বাম দারুণ কাজ করে। তাই, পুরু করে লিপ বাম দিন। এতে করে ঠোঁট নরম এবং মসৃণ হবে।
read more article:
5 STEPS CELL PHONE COVER DESIGNING – ৫ ধাপ সেল ফোন কভার ডিজাইনিং