পার্জিং vs ব্রেকআউট- ত্বকের যত্নের জগতে এটি অস্বীকার করা একটি গোলকধাঁধার মধ্য দিয়ে যাত্রার মতো অনুভব করতে পারে। সবচেয়ে বিভ্রান্তিকর এবং হতাশাজনক অংশগুলির মধ্যে একটি হল আপনার ত্বক পরিষ্কার বা ভেঙে যাচ্ছে কিনা তা খুঁজে বের করা। কখন আপনার স্কিন কেয়ার ত্যাগ করবেন তা নির্ধারণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা, এবং আমরা আপনাকে এটি আয়ত্ত করতে সহায়তা করতে এখানে আছি।
একজন পাকা স্কিনকেয়ার উত্সাহী হিসাবে, আমি এটি সবই দেখেছি – অলৌকিক পণ্য থেকে মহাকাব্য ব্যর্থতা পর্যন্ত। বিশুদ্ধকরণ এবং ব্রেকআউটের মধ্যে পার্থক্য বোঝা আপনাকে অনেক ঘুমহীন রাত এবং মুখ মোছা থেকে বাঁচাতে পারে। সুতরাং, আপনি যদি আপনার ত্বকের রহস্যময় প্রতিক্রিয়াগুলিকে ডিকোড করতে প্রস্তুত হন এবং কখন ধরে রাখতে হবে এবং কখন ছেড়ে দিতে হবে তা নির্ধারণ করতে প্রস্তুত হন, পড়া চালিয়ে যান।

প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ রূপচর্চার জন্য কত কিছু ব্যবহার করে আসছে। সুন্দর, মসৃণ ও ঝলমলে ত্বকের জন্য মানুষের কতই না চেষ্টা! ত্বকের যত্নে তাই রয়েছে অসংখ্য স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট। বিউটি ট্রিটমেন্টের জন্য ব্যবহৃত এসব প্রোডাক্ট বর্তমানে সকলেরই হাতের নাগালে। কিন্তু যখন প্রোডাক্টটির কারণে পিম্পলস দেখা দেয় তখন মনটাই ভেঙে যায়।
ধরুন, কোনো একটি নতুন স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কিনলেন আপনি। অবশ্যই সেটি আপনি বাছাই করেছেন ত্বকের কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য। কিন্তু ব্যবহার করার পর দেখলেন উল্টো প্রতিক্রিয়া। যেমন – পিম্পলস উঠা শুরু করেছে। এমন ক্ষেত্রে মনের মধ্যে দুটি ভাবনা আসে। হয় প্রোডাক্টটি মোটেও ভালো নয়; আর নয়তো প্রোডাক্টটি আপনার ত্বকের জন্য উপযুক্ত নয়। ব্যাপারটা কিন্তু আসলে তেমন নয়। ঠিক এখানটাতেই আসে স্কিন পার্জিং এবং ব্রেকআউটের কথা।
অনেক সময় দেখা যায়, নতুন কোনো প্রোডাক্ট ব্যবহারের শুরু করলে শুরুতে ত্বকের অবস্থা কিছুটা খারাপের দিকে যায়। তবে এটি সাময়িক। কেননা, কিছুদিনের মধ্যেই ত্বকের উন্নতি নজরে পড়ে। এই ব্যাপারটিকেই স্কিন পার্জিং বলা হয়। কিন্তু এটি ব্রেকআউট নয়। ব্রেকআউট হলে ত্বকে লালচে ভাব আসে এবং অ্যালার্জি দেখা দেয়। দুটির মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। আর তাই নিয়েই আজকের বিউটি ব্লগ। চলুন জেনে নিই এই দুইয়ের পার্থক্য।
স্কিন পার্জিং কি
ত্বক যখন নতুন কোনো স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা খুঁজে পায়, তখন ত্বকে পিম্পলের দেখা মেলে। কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্টস এবং রেটিনয়েডের ফলে ত্বকে উন্নতি দেখা দেয়। পিম্পলস তখন গায়েব হয়ে যায় এবং স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টটি কার্যকর হয়। পিম্পলস ওঠার এই সময়টাকে স্কিন পার্জিং বলা হয়ে থাকে। ত্বকের নিত্যদিনের রুটিনে নতুন কোনো স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট যুক্ত হলে কোষের টার্নওভার বা এক্সফোলিয়েট হলে স্কিন পার্জিং ঘটে। এই সময় ত্বকের গভীরে থাকা মাইক্রোকোমোডোনস (ক্ষুদ্র পিম্পলস যা চোখে ধরা পড়ে না) ত্বকের উপরিতলে উঠে আসে। মনে হতে পারে এটা ব্রেকআউট, কিন্তু আসলে এটি ত্বক এডজাস্ট করে নেওয়ার একটি প্রক্রিয়া মাত্র।
ধরা যাক, আপনি এমন কোনো স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট বেছে নিয়েছেন যেটা আপনার ত্বকের জন্য উপকারী। কিন্তু ব্যবহার শুরু করতেই আপনার ত্বক আরও বেশি পিম্পলসে ছেয়ে গেল। তখন আপনার স্বাভাবিকভাবেই মনে হবে যে, প্রোডাক্টটি হয়তো আপনার ত্বকের জন্য নয় বা খারাপ। কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও এমন নয়। আপনার স্কিনের গভীরে থাকা ইনফ্লেমেশনগুলোকে স্কিনের সারফেসে পাঠিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে প্রোডাক্টটি। ফলে আপনার স্কিনে দেখা দিয়েছে সাময়িক পিম্পলস। এই ব্যাপারটিকেই স্কিন পার্জিং বলা হয়।
ব্রেকআউট কি?
ত্বকে নতুন কোনো স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট যদি ব্যবহার করা হয় যা ত্বকের সঙ্গে ঠিক মানানসই না হয়, তবে ত্বকে বাজে ভাব দেখা দিতে পারে। র্যাশ, এলার্জি এমনকি পিম্পল দেখা দিতে পারে ত্বকের উপরিতলে। পার্জিং ভেবে ভুল করলে চলবে না; কারণ এটা হচ্ছে ব্রেকআউট। মানে সত্যিকার অর্থে প্রোডাক্টটি আপনার ত্বকে কাজ করছে না। আপনার ত্বকের লোমকূপগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে, ত্বকে এলার্জি বা র্যাশ দেখা দিতে পারে, কিংবা ত্বক জ্বালাপোড়াও শুরু করতে পারে। এমতাবস্থায় স্কিন পার্জিং ভেবে প্রোডাক্টটি চালিয়ে যাওয়াটা অবস্থা আরো বেগতিক করে তুলতে পারে। তাই বুঝতে হবে কোনটা স্কিন পার্জিং এবং কোনটা ব্রেকআউট!
ধরা যাক, আপনি কোনো স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট বাছাই করে ব্যবহার করা শুরু করলেন। আপনার ত্বকে পিম্পল দেখা দিল এবং এলার্জি, র্যাশ ও ত্বকে লালচে ভাব ফিরে এলো। তখন যদি এটাকে স্কিন পার্জিং ভেবে থাকেন তাহলে ভুল করছেন। কারণ প্রোডাক্টটির সেনসিটিভিটির কারণে অথবা ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হয়ে যাবার কারণে স্কিনে পিম্পল, র্যাশ অথবা এলার্জি জাতীয় লালচে ভাব দেখা দেয়। এটি মোটেও স্কিনের ইম্প্রুভমেন্টের কারণ নয়। বরং এটি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।
পার্জিং নাকি ব্রেকআউট?
স্কিনে পার্জিং হচ্ছে নাকি ব্রেকআউট তা যেমন জরুরি তেমনি বুঝতে পারাটাও অত্যন্ত কঠিন। যখনই আপনি আপনার ত্বকের নিত্যদিনের রুটিনে নতুন কোনো বিউটি প্রোডাক্ট যুক্ত করবেন, মনে রাখবেন এর সব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই ত্বকের জন্য উপকারী নাও হতে পারে। তাই সতর্ক থাকতে হবে। তবে যেহেতু পার্জিং এবং ব্রেকআউটের লক্ষণগুলো একই রকম, তাই ব্যাপারটা একটু জটিলই বটে। এই দুইয়ের পার্থক্য বুঝতে আপনাকে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে-
সময়: প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে ব্রেকআউটের সময়কাল সম্পর্কে। যদি এই ব্রেকআউট স্কিন পার্জিং হয়ে থাকে, তাহলে পিম্পলগুলো সাধারণের চাইতে দ্রুত বেড়ে উঠবে। আবার, ব্রেকআউটের চাইতে অনেক দ্রুত আপনা-আপনি নিরাময়ও হয়ে যাবে। ধরা যাক, আপনি নতুন কোনো বিউটি প্রোডাক্ট ব্যবহার শুরু করেছেন যেটার পার্জিং সময়কাল ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ। যদি এই ব্রেকআউটের সময়কালের মধ্যে স্কিনে কোনো ইমপ্রুভমেন্ট না হয়ে থাকে, তবে সেটি নিঃসন্দেহে ব্রেকআউট। এটি পার্জিং নয়।
স্থান: পার্জিং নাকি ব্রেকআউট চেনার আরেকটি উপায় হচ্ছে স্থান। অর্থাৎ মুখমণ্ডলের কোথায় ব্রেকআউট হচ্ছে, সেই বিষয়টিতে বিশেষ নজর দেয়া। যদি স্কিন পার্জিং হয়, তাহলে সাধারণত ত্বকের যেসব জায়গায় এমনিতেই পিম্পল হয়, সেসব জায়গাতেই পিম্পল দেখা যাবে। কিন্তু সাধারণ অঞ্চল বাদে অন্য কোথাও পিম্পল দেখা দিলে বা জ্বালাপোড়া করলে, তবে সেটা ব্রেকআউটের পূর্ব লক্ষণ।
অ্যাকটিভ ইনগ্রিডিয়েন্টস: ত্বকের যত্নে বোঝা যায় পার্জিং করছে কিনা বা ব্রেকআউটে পরিণতি হচ্ছে, তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পাথ হলো অ্যাকটিভ ইনগ্রিডিয়েন্টস বা সক্রিয় উপাদান। এই উপাদানগুলি যেমন রেটিনল, আলফা ও বেটা হাইড্রো অ্যাসিড, সালসাইলিক অ্যাসিড এবং বেনজয়েইল পারক্সাইড, ত্বকের পরিষ্কার করতে ও স্কিন পার্জে সাহায্য করতে পারে। তবে, যদি আপনি সানস্ক্রিন, হাইড্রেটিং ওয়েল বা অন্য কোনও পণ্য ব্যবহার করেন যা ত্বকের পোরে অবাধ্য করে দিতে পারে, বা কোমিডোজেনিক মেকআপ পণ্য ব্যবহার করেন, তবে তাদের ফলে আপনার ত্বকে ব্রেকআউট ঘটতে পারে বলে মনে রাখুন, পার্জিং নয়।
করণীয়:
তারা বলে, স্কিনকেয়ারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো অপেক্ষা করা। তবে একাধিক বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিক পরামর্শ দেয়। যেমন, মুখের ভালো যেন ধুয়ে রাখা, ব্রেকআউটের সময় স্পষ্ট রাখা, স্কিন পার্জিং ঘটার সময় যদি অস্বীকৃতি হয় তবে প্রোডাক্টটি বন্ধ করে দিতে বলেছেন।
read more article:
THE REASON BEHIND MELASMA-মেলাসমার পিছনে কারণ
HOW TO CHOOSE RIGHT BODY LOTION-কিভাবে সঠিক বডি লোশন নির্বাচন করবেন