রিবন্ডিং কেন করবো?
চুল যার যতবেশি সিল্কি, স্মুথ,স্ট্রেইট ও মেনেজেবল থাকে তাকে দেখতেও ততবেশি পরিপাটি ও গোছানো লাগে
কেউ কেউ জন্মগতভাবে অনেক কার্লিচুল পেয়ে থাকে আবার কারোর চুল হয় অতিমাত্রায় রুক্ষ ও ড্যামেজ বয়সের সাথে সাথে চুল তার পুষ্টি, ক্যারাটিন,ন্যাচরাল অয়েল ও অন্যান্য গুনাগুন হারাতে থাকে সেক্ষেত্রে চুল দেখায় ভিষণ ফ্রিজি, এলোমেলো ও কোঁকড়ানো যা কিনা দেখতে ভালো দেখায় না তাই অধিকাংশ আপুরাই চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ও পরিপাটি লুক পেতে বেছে নেই রিবন্ডিং
এখন বলি রিবন্ডিং কেন করবো?
অনেকেই কোঁকড়া চুল পছন্দ করেন না তাই রিবন্ডিং করান। চুল রিবন্ডিং করালে অন্তত ছয় মাস বা এক বছর চুল সোজা থাকে। স্ট্রেইট চুলের সুবিধা হলো, খুব সামান্যতেই দেখতে গোছানো লাগে। চুল রিবন্ডিং করালেই কিন্তু কাজ শেষ নয়, রিবন্ডিং চুলের জন্য চাই বাড়তি যত্ন।
কিভাবে রিবন্ডিং করবো?

এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে রিবন্ডিং করবেন রিবন্ডিং টিপস
রিবন্ডিং করতে যা যা লাগে
রিলাক্সেন্ট/সফটেনার ক্রীম,-কেরাটিন লোশন,-নিউট্রালাইজার এবং-গ্লাভস
২. কম কেমিকেল যুক্ত শ্যাম্পু,৩. ব্লো-ড্রায়ার ,৪. কয়েক রকম চিরুনি (মোটা দাঁতের,সরু দাঁতের,দু-মুখী ),৫. চুলের ক্লীপ ,৬. চুলের স্টীমার (বড় বড় শপিং মল গু্লো থেকে কিনতে পারবেন) ,৭. আয়রন মেশিন (সিরামিকের তৈরী সমতল আয়রন হলে ভালো)
১. প্রথমেই ভালো ব্র্যান্ডের একটি মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে সমস্ত চুল ধুয়ে নিন। ভালো মত পরিষ্কার করার পর তোয়ালে দিয়ে চুল মুছে নিন। প্রয়োজনে ব্লো-ড্রায়ার ব্যবহার করতে পারেন, তবে খেয়াল রাখুন হিট যেন মধ্যম প্রকৃতির হয়।
২. এরপর প্রথমে মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আলগা করে নিন, পরে সরু টা দিয়ে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে ক্লীপ দিয়ে আটকে দিন।
৩. রিবন্ডিং কিট এর সাথে যে গ্লাভস দেয়া থাকে তা পরে নিন। তারপর রিলাক্সেন্ট/সফটেনার ক্রীম পুরো চুলে লাগিয়ে দিন। তাড়াহুড়ো করবেন না, আস্তে আস্তে সব চুল ক্রীম টি দিয়ে কভার করুন। এভাবে অন্তত ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। আপনি যে ব্র্যান্ডের কিট ব্যবহার করবেন তার ব্যবহার বিধি পড়ে নিন, কোন কোন প্রডাক্ট এর ব্যবহার বিধি ভিন্ন হতে পারে,তাই পড়ে নেওয়া ভালো। কেননা ক্রীমের কাজ করার ক্ষমতা কোম্পানী ভেদে ভিন্ন হতে পারে।
৪. এবার হেয়ার স্টীমার দিয়ে ১০-৩০ মিনিটের মত স্টীম নিন। খেয়াল রাখবেন যেন হেয়ার স্টীমার হয়, ফেস স্টীমার এবং হেয়ার স্টীমার আলাদা হয়।
৫. যদি আপনার কাছে হেয়ার স্টীমার না থাকে অথবা কিনতে যাওয়ার সময় স্বল্পতা থাকে তবে চুলাতে একটি বড় পাত্রে পানি ফুটিয়ে নিন। গ্লাভস পরা অবস্থায় ঐ গরম পানির পাত্রে একটি তোয়ালে ডুবিয়ে সেটি নিঙড়ে নিন। তারপর ঐ তোয়ালে টি মাথায় পেচিয়ে নিন। আপনার চুলের দৈর্ঘ্য ও অবস্থা অনুযায়ী সময় দিন।
৬. এখন রিলাক্সেন্ট/সফটেনার ক্রীম টি ভালো করে ধুয়ে নিন। শ্যাম্পু করবেন না, শুধু পানি ব্যবহার করুন। তারপর ব্লো-ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে নিন।
৭. এবার কেরাটিন লোশন ব্যবহারে পালা। এটি একটি প্রোটিনের তৈরী লোশন। একে ধুয়ে ফেলবেন না, চুলে রেখে দিন।
৮. এবার আয়রন মেশিনের সাহায্যে চুল স্ট্রেইট করতে থাকুন যতক্ষণ না তা পুরোপুরি সোজা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ফ্ল্যাট আয়রন ব্যবহার করুন , যা চুলের ছোট ছোট কোকড়ানো গুলোও সোজা করে দেবে।
৯. খেয়াল করুন তো রিবন্ডিং কিটের কোন বস্তুটি এখনো ব্যবহার করা হয় নি? হ্যা ঠিক ধরেছেন, নিউট্রালাইজার। এবার আবারো আগের মত চুল গুলোকে কয়েক ভাগে ভাগ করুন এবং প্রতি ভাগে নিউট্রালাইজার লাগান। নিউট্রালাইজার লাগিয়ে ৩০ মিনিটের মত অপেক্ষা করুন। এবারো কিটের লেখা অনুসরণ করুন। নিউট্রালাইজার চুলের সোজা ভাবকে আঁটকে দেয় এবং বজায় রাখে।
১০. ঠান্ডা পানিতে চুল ধুয়ে নিন এবং ব্লো-ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে নিন।
১১. শেষে আরেকবার ফ্ল্যাট আয়রন দিয়ে চুল স্ট্রেইট করে নিন।
সমস্ত কার্যক্রম শেষ হতে ৪-৫ ঘণ্টা সময় লাগে। রিবন্ডিং টিপস সমূহ মেনে চুল রিবন্ডিং করলে আশা করি আপনি আশানুরূপ ফল পাবেন। রিবন্ডিং টিপস সমূহ তো জানলেন, এবার চলুন জেন নিই রিবন্ডিং নিয়ে কিছু সতর্কতা নিয়ে
রিবন্ডিং এর পরিচর্যা কী?
জেনে নিন, রিবন্ডিং করানোর পর কিভাবে চুলে যত্ন নিবেন:
১। চুল রিবন্ডিং করানোর পর আপনাকে পার্লার থেকেই কিছু প্রোডাক্ট দিয়ে দেওয়া হয় যেগুলো এ’ধরনের ট্রিটমেন্ট করা চুলের জন্যই ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু মিনে রাখবেন, শ্যাম্পু করার আগে চুলে ভাল করে তেল মাখা খুব জরুরি। নারকেল তেল সামান্য গরম করে চুলের গোড়ায় ভাল করে মাসাজ করুন। এরপর ভাল করে মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে নিন। উষ্ণ জলে তোয়ালে
২। যদি আপনাকে পার্লার থেকে কোনও শ্যাম্পু না দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে আপনি নিজেই কিনে নিন আপনার চুলের উপযোগী শ্যাম্পু। সাধারণ চুলে যেরকম শ্যাম্পু আপনি ব্যবহার করতে পারেন, রিবন্ডিং করা চুলে কিন্তু সেই শ্যাম্পু একেবারেই করা যাবে না। শ্যাম্পু করার আগে ভাল করে স্ক্যাল্প ও চুল ভিজিয়ে নিন। স্ক্যাল্পে সরাসরি শ্যাম্পু ঢালবেন না। একটা মগে অল্প জল নিয়ে শ্যাম্পু গুলে নিন এবং শ্যাম্পু মেশানো জল অল্প অল্প করে মাথায় ঢালুন। আলতোভাবে স্ক্যাল্প মাসাজ করুন। শ্যাম্পুর ফেনা চুলের ডগা পর্যন্ত নিয়ে আসুন। ভুল করেও কিন্তু চুল ঘষবেন না হাত দিয়ে, এতে স্প্লিটএন্ডসের আশঙ্কা থাকে। সম্ভব হলে সপ্তাহে দুই-তিন দিন শ্যাম্পু করুন।
৩। রিবন্ডিং করানোর কিছুদিন পর যদি চুল রুক্ষ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে স্নানের সময়ে দু’লিটার জলে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে সেই জল দিয়ে চুল ধুতে পারেন। তবে এটি রোজ করবেন না। আপনার রিবন্ডিং করানো চুলে যদি রং না করানো থাকে সেক্ষেত্রে চায়ের লিকার ঠান্ডা করে সপ্তাহে একবার করে তা দিয়ে চুল ধুতে পারেন। এতে চুল বেশ মোলায়েম ও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
৪। রিবন্ডিং করা চুলে কিন্তু কখনও গরম জল দেওয়া যাবে না। কাজেই যতবার চুল ধোবেন, ঠান্ডা জলেই ধুতে হবে।
৫। নিয়মিত চুল ট্রিম করাতে ভুলবেন না। এছাড়াও রিবন্ডিং করানোর পর অন্তত এক বছর চুলে অন্য কোনও রাসায়নিক ট্রিটমেন্ট করাবেন না।
গরম পানি দিয়ে কখনোই চুল ধোবেন না। কুসুম গরম পানিও ব্যবহার করা যাবে না। শ্যাম্পু করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে চুল ধুয়ে ফেলুন।
৬।রিবন্ডিং করা চুলকে কন্ডিশন করা আবশ্যক। যখনই বাইরে যেতে হবে তখনই লিভ-ইন কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। তাছাড়া শ্যাম্পু করার পর পর্যাপ্ত পরিমাণে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।
৭।নিয়মিত চুল ট্রিম করাতে ভুলবেন না এছাড়াও রিবন্ডিং করানোর পর অন্তত একবছর চুলে অন্য কোনও রাসায়নিক ট্রিটমেন্ট করাবেন না
উপরোক্ত নিয়ম মেনে চললেই আপনি আপনার পছন্দানুযায়ী পার্ফেক্ট রিবন্ডিং হেয়ার লুকটি পেয়ে যাবেন তাছাড়াও যেকোনো প্রোডাক্ট ইউজ করার ক্ষেত্রে চেষ্টা করুন অথেনটিক প্রোডাক্ট চুজ করার। অথেনটিক মেকআপ, স্কিনকেয়ার ও হেয়ারকেয়ার প্রোডাক্টসের জন্য আপনারাও ভিজিট করতে পারেন আইগ্লামার্সের ওয়েবসাইট। আপনারা চাইলে অনলাইনে আইগ্লামার্স ডট কম থেকেও কিনতে পারেন আপনার দরকারি বা পছন্দের সব প্রোডাক্টস।
Read more: রিবন্ডিং কেন করবো?কিভাবে করবো? এবং এর পরিচর্যা কী?